শেখ হাসিনাকে সেই রাতে যে পরামর্শ দিয়েছিল ‘গ্যাং অব ফোর’
গত রোববার (২৫ মে) জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় রাজধানীর চানখাঁরপুল এলাকায় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ট্রাইব্যুনালে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ (ফরমাল চার্জ) দাখিল করেন চিফ প্রসিকিউটর। শুনানিতে তিনি ২০২৪ সালের ৪ ও ৫ আগস্টের কিছু ঘটনা তুলে ধরেন, যার বর্ণনা আনুষ্ঠানিক অভিযোগেও উল্লেখ রয়েছে।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চিফ প্রসিকিউটরের ভাষ্যে উঠে এসেছে বেশ কিছু চাঞ্চল্যকর তথ্য। সেই সময়কার ঘটনার বিস্তারিত তুলে ধরে তিনি বলেন, কঠোর অবস্থানে থাকার জন্য শেখ হাসিনাকে সেই রাতে (৪ আগস্ট) পরামর্শ দিয়েছিলেন ‘গ্যাং অব ফোর’। তাঁর ভাষ্যে, তারা (গ্যাং অব ফোর) হলেন দলীয় কার্যক্রম নিষিদ্ধঘোষিত আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ও পতিত প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান।
চিফ প্রসিকিউটর জানান, কোনোভাবেই নরম হওয়া যাবে না, শেখ হাসিনাকে এমন পরামর্শ দিয়েছিলেন তারা। এছাড়া, ৪ আগস্ট রাত ১২টা থেকে সোয়া ১২টার দিকে অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকে ‘উত্তেজনাপূর্ণ ও ভয়ংকর’ আখ্যা দেন তিনি। তিনি জানান, বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর প্রধানসহ সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের মন্ত্রী ও উপদেষ্টারা।
তিনি আরও জানান, ৪ আগস্ট প্রথমে শেখ হাসিনার পদত্যাগের বিষয়টি তোলেন তৎকালীন প্রতিরক্ষাবিষয়ক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিক। এতে শেখ হাসিনা ক্ষুব্ধ হন এবং বলেন, যা হওয়ার হবে, তিনি ক্ষমতা ছাড়বেন না।
এছাড়া, ৫ আগস্ট সকালে অনুষ্ঠিত আরেকটি বৈঠকে তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল–মামুন জানান, বাহিনী ক্লান্ত, অস্ত্র ও গোলাবারুদ ফুরিয়ে আসছে। সামরিক কর্মকর্তারা আবারও শেখ হাসিনাকে পদত্যাগের পরামর্শ দেন। চিফ প্রসিকিউটর জানান, পরিস্থিতির ভয়াবহতা বুঝিয়ে শেখ হাসিনাকে বোঝানোর চেষ্টা করেন তার ছোট বোন শেখ রেহানা। এমনকি তিনি শেখ হাসিনার পা জড়িয়ে ধরেন। এরপর সামরিক কর্মকর্তারা শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের সঙ্গে কথা বলেন।
জয়কে সামরিক কর্মকর্তারা বলেন, সময় গুরুত্বপূর্ণ, প্রাণে বাঁচাতে হলে তার মায়ের পদত্যাগ করা ছাড়া উপায় নেই। আর এখনই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। পরিস্থিতি বুঝতে পেরে শেখ হাসিনার সঙ্গে কথা বলেন জয় এবং তার কথায় ক্ষমতা ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেন শেখ হাসিনা।
শেখ হাসিনা দেশ ছাড়ার আগে জাতির উদ্দেশে একটি ভাষণ রেকর্ড করতে চাইলেও সেনা কর্মকর্তারা তাতে অনুমতি দেননি। সময় স্বল্পতায় তাকে ৪৫ মিনিট সময় দেওয়া হয় প্রস্তুতির জন্য। চিফ প্রসিকিউটর বলেন, ৫ আগস্ট দুপুর ২টায় সেনাপ্রধানের বক্তব্য প্রচারের কথা জানানো হলেও তা প্রচার হয় বিকেল ৪টায়। এর আগেই শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যান।