পেশাজীবীদের জন্য সুসংবাদ! মালয়েশিয়ার ২০২৫ EP প্রোগ্রামে চাকরির অভাবনীয় সুযোগ
মালয়েশিয়া দক্ষ পেশাজীবীদের জন্য ২০২৫ সালে তাদের এমপ্লয়মেন্ট পাস (EP) প্রোগ্রামে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন এনেছে। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অন্যতম দ্রুতবর্ধনশীল অর্থনীতির দেশ মালয়েশিয়া বিদেশি প্রতিভার প্রতি আগ্রহ প্রকাশ করে এই নতুন সংস্করণটি চালু করেছে, যাতে আন্তর্জাতিক পেশাজীবীরা আরও সহজে দেশটিতে কাজ ও বসবাস করতে পারেন।
EP হলো এমন একটি কর্মভিত্তিক ভিসা, যার মাধ্যমে বিদেশি নাগরিকরা বৈধভাবে মালয়েশিয়ায় কাজ করার অনুমতি পান। এই পাসটি শুধুমাত্র একটি অনুমতি নয়; বরং এটি একটি কাঠামোবদ্ধ ব্যবস্থা যা অভিজ্ঞ পেশাজীবীদের একটি স্থায়ী ক্যারিয়ার গড়ার সুযোগ দেয়।
২০২৫ সালের সংস্করণে মালয়েশিয়ার সরকার বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন এনেছে। যারা ইতিমধ্যেই মালয়েশিয়ায় কর্মরত এবং পদের পরিবর্তন চান, তাদের জন্য “চেঞ্জ অব ক্যাটাগরি” চিঠি বাধ্যতামূলক করা হয়েছে, যা আগের পাস বাতিল করে নতুন পদের সাথে মিল রেখে আবেদনের ক্ষেত্রে জমা দিতে হবে। একইসঙ্গে EP, ডিপেনডেন্ট পাস ও লং-টার্ম ভিজিট পাসের ফি বাড়ানো হয়েছে, যা একটি উন্নত পরিষেবা নিশ্চিতে সরকারের প্রতিশ্রুতি প্রতিফলিত করে। আরও একটি বড় পরিবর্তন হলো, EP এখন সম্পূর্ণভাবে ডিজিটালাইজড হয়েছে। আগের মতো আর পাসপোর্টে স্টিকার লাগানোর দরকার নেই; বরং আবেদনকারীরা একটি ডিজিটাল ePASS ডাউনলোড করে ব্যবহার করতে পারবেন। এটি নিরাপদ, দ্রুত এবং আন্তর্জাতিক মানের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
স্থানীয় প্রতিভা বিকাশের জন্য মালয়েশিয়ান সরকার আরও একটি নতুন শর্ত যুক্ত করেছে—যেখানে কোনো প্রতিষ্ঠান EP-এর আওতায় বিদেশি কর্মী নিয়োগ দিলে, তাদের প্রতি ১ জন বিদেশি পেশাজীবীর বিপরীতে ৩ জন স্থানীয় শিক্ষার্থীকে ইন্টার্নশিপ দেওয়ার সুযোগ তৈরি করতে হবে। ২০২৫ সালের শেষ পর্যন্ত এই নিয়ম কার্যকর থাকবে। মালয়েশিয়ার Employment Pass তিনটি ক্যাটাগরিতে ভাগ করা হয়েছে—উচ্চ বেতনভুক্ত, মধ্যম স্তরের এবং নিম্ন বেতনভুক্ত পেশার ভিত্তিতে। যেমন, ক্যাটাগরি I পেশাজীবীরা প্রতি মাসে RM10,000 বা তার বেশি আয় করেন এবং এই পাস ৫ বছর পর্যন্ত বৈধ থাকে। ক্যাটাগরি II মধ্যম স্তরের পেশাজীবীদের জন্য এবং ক্যাটাগরি III মূলত টেকনিক্যাল বা এন্ট্রি-লেভেল পদের জন্য নির্ধারিত।
যে কেউ EP-এর জন্য আবেদন করতে চাইলে তাকে অবশ্যই মালয়েশিয়ার ESD-রেজিস্টার্ড কোনো কোম্পানি থেকে বৈধ চাকরির অফার পেতে হবে। আবেদনকারীর শিক্ষাগত বা পেশাগত যোগ্যতা থাকতে হবে, নির্ধারিত বেতনসীমা পূরণ করতে হবে এবং প্রয়োজনে সেক্টরভিত্তিক অতিরিক্ত অনুমোদন পেতে হতে পারে। এ ক্ষেত্রে কোম্পানিকেই আবেদন প্রক্রিয়ার পুরো দায়িত্ব নিতে হয় এবং প্রমাণ দিতে হয় যে স্থানীয়দের দিয়ে কাজটি করানো সম্ভব নয়।
এছাড়াও, মালয়েশিয়ার “Malaysia Critical Occupations List” (MyCOL) একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক। এই তালিকায় এমন পেশার উল্লেখ রয়েছে যেগুলোর জন্য দেশে পর্যাপ্ত দক্ষ কর্মী নেই। তালিকায় যদি আপনার পেশাটি থাকে, তাহলে আপনার আবেদন অনুমোদনের সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যায়। ইঞ্জিনিয়ার, IT বিশেষজ্ঞ, চিকিৎসক, ফিনান্স ম্যানেজার, পাইলট, পরিবেশবিজ্ঞানী ইত্যাদি পেশা প্রায়ই এই তালিকায় দেখা যায়।
পুরো আবেদন প্রক্রিয়াটি শুরু হয় কোম্পানির ESD রেজিস্ট্রেশনের মাধ্যমে। এরপর নিয়োগকৃত পদের অনুমোদন নিতে হয়, আবেদনকারী প্রাসঙ্গিক কাগজপত্রসহ অনলাইনে আবেদন করেন এবং সাধারণত ৫-১০ কর্মদিবসে সিদ্ধান্ত পাওয়া যায়। অনুমোদনের পর আবেদনকারী ePASS ডাউনলোড করে ব্যবহার করতে পারেন।
EP হোল্ডারদের জন্য তাদের স্ত্রী বা স্বামী ও নির্ভরশীলদের মালয়েশিয়ায় নিয়ে যাওয়ার সুযোগ রয়েছে। ডিপেনডেন্ট পাসের মাধ্যমে এ সুবিধা পাওয়া যায়, যদিও ২০২৫ সালে এই ফি-তেও কিছুটা বৃদ্ধি হয়েছে। তবুও পুরো প্রক্রিয়াটি তুলনামূলকভাবে সহজ।
সব মিলিয়ে, মালয়েশিয়া দক্ষ বিদেশি পেশাজীবীদের জন্য একটি আরও বেশি স্বচ্ছ, কার্যকর ও ডিজিটালাইজড EP প্রোগ্রাম চালু করেছে। যদি আপনার দক্ষতা MyCOL তালিকায় থাকে এবং একটি উপযুক্ত চাকরির অফার থাকে, তাহলে ২০২৫ সাল হতে পারে মালয়েশিয়ায় একটি নতুন ক্যারিয়ারের জন্য আপনার সেরা সময়।