" অনেকের ধারণা পুকুরের পানি শরীরে মাখলে দূর হয় রোগ বালাই - dailymorning.online

banner

অনেকের ধারণা পুকুরের পানি শরীরে মাখলে দূর হয় রোগ বালাই

একটি পুকুরকে ঘিরে হাজার ভক্তের মিলনমেলা। কারও হাতে খেলনা, কারও হাতে গৃহস্থালির প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র। তরুণীরা কিনেছেন তাদের পছন্দের চুড়ি-ফিতা ও গহনা। কেউবা বাড়ির জন্য নিয়ে ফিরছেন মুখরোচক তেলে ভাজা বিভিন্ন খাবার। সবার মধ্যে উৎসবের আমেজ। আর এ আমেজ ঠাকুরগাঁওয়ের গড়েয়া ইউনিয়নের মিলনপুর গ্রামে ২০০ বছরের পুরোনো ঐতিহ্যবাহী নাককাটি মেলাকে কেন্দ্র করে। বাংলা নয়া বছরের অর্থাৎ বৈশাখের তৃতীয় শনিবার দিন ব্যাপী চলে এ মেলা।

আয়োজকদের দাবি, শ্রী শ্রী শ্যামসুন্দর গৌড়ীয় মঠ-লস্করা টুপুলীর আয়োজনে এবার নিয়ে ২০০ তমবারের মতো আয়োজন করা হয়েছে এ মেলার। ঐতিহ্যবাহী নাককাটি মেলা প্রাঙ্গণ হাজারও মানুষের মিলনমেলায় মুখরিত হয়ে উঠে।

মেলা উপলক্ষে দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলা থেকে দুই শতাধিক দোকানি নানা রকমের পণ্য নিয়ে হাজির হন প্রত্যেক বছর। মাটির তৈরি নানান খেলনা ও শিল্পকর্ম, বাঁশ, বেত, কাঠ, শঙ্খ, লোহা এবং গ্রামীণ হস্তশিল্পের বাহারী পণ্য যেন ফিরে নিয়ে যায় লোকজ ঐতিহ্যের অতীত দিনে। মেলায় নানা দোকানে শিশুদের জন্য খেলনা, ঘরোয়া প্রয়োজনীয় আসবাবপত্র এবং গ্রামীণ খাদ্যের পসরা ছিল জমজমাট। মেলাকে কেন্দ্র করে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সব বয়সের মানুষ উৎসব-আনন্দে মেতে উঠেছেন।


আয়োজক ও মন্দির কমিটি সূত্রে জানা যায়, নাককাটি ঠাকুরের নাম অনুসারেই মেলার নামকরণ করা হয় নাককাটি মেলা। নাককাটি ঠাকুর মন্দিরের পাশে এক পুকুরে অবস্থান নেয়। সেই পুকুরের পানি শরীরে ছিটালে সমস্ত রোগ বালাই দূর হয়। কেউ যদি এই পুকুরের পানি পান করে কোনো মানত রাখে তা পূর্ণ হয়। বিশেষ করে কেউ যদি বিয়ে করে বা বিয়ের আগে দিন এসে এই পুকুরে তার মনে কথা খুলে বললে বিয়ের জন্য থালাবাসন গহনাসহ যাবতীয় আসবাপত্র তিনি পেয়ে যান। তাই সবাই মেলায় এসে সর্বপ্রথম এই পুকুরকে পূজা করে। তাই নাককাটি পূজা জনপ্রিয় হয়ে ওঠে এ অঞ্চলের হিন্দুধর্মের অনুসারীদের কাছে। সেই পূজাকে কেন্দ্র করে বসে নাককাটি মেলা। সেই সময় শুধু হিন্দু ধর্মের মানুষ এ মেলায় আসতেন। তবে এ মেলা এখন আর কোনো ধর্মের মানুষের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। সম্প্রীতির এক মেলবন্ধন হয়ে উঠেছে।

সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে, শনিবার (৩ মে) সকাল থেকে শুরু হয়ে সন্ধ্যা ৭ পর্যন্ত চলে মেলা। তবে বেশি দর্শনার্থী আসেন দুপুরের পর থেকে। স্টলগুলোতে বিক্রেতাদের সঙ্গে দরদাম করে পছন্দের সামগ্রী কিনছেন দর্শনার্থীরা।

শুধু ঠাকুরগাঁও শহর নয়। এ মেলায় পঞ্চগড়, নীলফামারী, সৈয়দপুর, দিনাজপুর, বীরগঞ্জ উপজেলার অনেক দর্শনার্থী আসেন। সবচেয়ে বেশি হই হুল্লোড় দেখা যায়, শিশুদের বিনোদনের রাইডগুলোতে। হাসি, চিৎকার, আনন্দ–উল্লাস ছিল রাইডের স্থানে। অনেক শিশু রাইডে চড়ছে, অনেকেই আবার রাইডে ওঠার অপেক্ষা আছে।

কথা হয় দিনাজপুর থেকে আসা মমতা রাণীর সঙ্গে। মেলায় ঘুরে ঘুরে কিনছিলেন বাচ্চাদের খেলনা। মমতা রানী ঢাকা পোস্টকে বলেন, ২৫ বছর আগে মা-বাবা আমাদের ভাই-বোনদের এ মেলায় নিয়ে আসতেন। আমরাও বছরে এই সময়টায় অপেক্ষায় থাকতাম কবে মেলা আসবে, বাবার সঙ্গে কবে মেলায় যাব। মেলায় এলে পুতুল, মাটির হাঁড়ি কিনতাম। নাগর দোলায় চড়তাম। ফিরে যাওয়ার সময় মজার মজার খাবার কিনে নিয়ে যেতাম। প্রতিবারই ঈদের মতো আনন্দ পেতাম।

মেলায় আসা মালতি রানী, মল্লিকা রানী ঢাকা পোস্টকে জানান, তারা প্রতিবছর মেলার জন্য অপেক্ষা করে থাকেন। গৃহস্থলী জিনিসপত্র অনেক কম দামে কেনা যায়। পাওয়া যায় সব ধরনের জিনিসপত্র। হরিপুর থেকে আসা শ্রাবণী জানান, ভাই-বোন ও আত্মীয়স্বজন নিয়ে মেলা দেখতে ও কেনাকাটা করতে এসেছি। 

মেলার আয়োজকরা ঢাকা পোস্টকে জানান, বাচ্চাদের খেলনা, বড়দের কসমেটিকস, কাপড়, ইমিটেশন, ঘরের জন্য ক্রোকারিজ, ফার্নিচার, সিরামিকের স্টল রয়েছে। এখান থেকে সুলভ মূল্যে দর্শনার্থীরা তাঁদের প্রয়োজনীয় ও পছন্দের পণ্যটি কিনতে পারেন। এ ছাড়া মেলায় নিমকি, মুরলি, পিডি, জিলাপি, লাড্ডু, চটপটি, ফুচকাসহ রয়েছে ২০-২৫ ধরনের মুখরুচক বিভিন্ন খাবারের দোকান। সব বয়সী দর্শনার্থীদের বিনোদনের জন্য নাগরদোলা, হানি সিংসহ ১০ ধরনের রাইড রয়েছে মেলায়। সব মিলিয়ে এবার মেলা ২০০টির মতো স্টল করা হয়েছে।
Next Post Previous Post

banner