" আইনীভাবে ঘৃণা চর্চাকে নিষিদ্ধ করেন: সায়ান - dailymorning.online

banner

আইনীভাবে ঘৃণা চর্চাকে নিষিদ্ধ করেন: সায়ান



অন্যায়ের বিরুদ্ধে বরাবরই সোচ্চার সংগীতশিল্পী ফারজানা ওয়াহিদ সায়ান। প্রতিবাদী গান, কবিতা ছাড়াও মিছিলের অগ্রভাগে দেখা যায় তাঁকে। জুলাই-আগস্ট আন্দোলনেও ছিলেন সামনের সারিতে। অভ্যুত্থান পরবর্তী সময়েও অন্যায়-অবিচারে নিজের কণ্ঠ জারি রেখেছেন এই শিল্পী। এবার তিনি ঘৃণা ও সহিংসতা চর্চার বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন।

সামাজিকমাধ্যমে রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক পরিসরে ক্রমবর্ধমানভাবে আক্রমণাত্মক ভাষা, অপমানজনক উপাধি এবং হত্যার হুমকির মতো প্রবণতা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন সায়ান।

সোমবার (১২ মে) দীর্ঘ এক ফেসবুক পোস্টে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারকে এসব বিষয়ে কঠোর হওয়ার জোর দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, ‌‘‌‘আপনারা ঘৃণা চর্চার বয়ানকে চিহ্নিত করুন, আক্রমণাত্মক ভাষা-ভঙ্গি—এগুলো নিয়ে কাজ করুন। সিভিলিয়ানদের জন্য সিভিল বিহিভিয়রের নূন্যতম স্ট্যান্ডার্ড তৈরি করার কথা ভাবুন। বিভিন্ন মঞ্চে গিয়ে একে বেশ্যা, তাকে দালাল—এগুলো তো রোজকার ব্যাপার হয়েছে। তার সঙ্গে এই যে জবাই করার কথা বলা, ‘ধরে ধরে জবাই কর’—এটা পৃথিবীর যেকোনো সমাজে, যেকোনো রাষ্ট্রে কীভাবে গ্রহণযোগ্য? এইভাবে ঘৃণার এবং হত্যা-হুমকির খুল্লামখুল্লা চর্চা চালিয়ে যাবে কেউ, আর তারপর সেটার কোনো পরিণতি হবে না, এটা কেন গ্রহণযোগ্য? এখানে তো ব্যক্তিকে হত্যা করার কথা বলা হচ্ছে। এটা কীভাবে স্বাভাবিক? এটা স্লোগান হিসাবে কেন আপত্তিকর নয়? হত্যার উস্কানি নয়? ২০১৩-তে এই ভাষা শুনেছি গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলনের সময়। আনন্দ হয় নাই প্রাণে। শিহরিত হই নাই। বিচার চাওয়া আর জবাই করা এক ব্যাপার না। বিচারের সংস্কৃতিই সেটা নয়।’’

যোগ করে সায়ান আরও বলেন, ‘‘সাধারণ জনতার ভিড়ে সুশীলও থাকেন, উন্মাদ মব-জনতাও থাকেন। তাদের কাছে কিছু আশা করি না বাড়তি। তারা রাষ্ট্রের দায়িত্বে নাই। তারা যে যার নীতি-গতি-বিবেক অনুযায়ী আচরণ করবেন, সকলেরই দেশ, সকলেই স্বাধীন। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দিক থেকে তো একটা মানদণ্ড থাকতে হবে আচরণের। কেন একটা মানুষ আরেকটা মানুষকে বেশ্যা ডেকে পার পাবেন? কেন যে কেউ যে কাউকে ভালো না লাগলেই জবাই করার হুমকি দেবেন, এবং তার স্বাভাবিকীকরণ হবে? কেন বিভিন্ন মাহফিলে ঘেন্না ছড়ানোর বয়ান চলতে পারে যুগের পর যুগ, অন্য ধর্মের মানুষদের প্রতি? মেয়েদের প্রতি? একটা ‘ঘৃণা নিয়ন্ত্রণ কমিশন’ এখন সময়ের দাবি।’’

আক্রমণাত্মক স্লোগনের বিরোধিতা করে সায়ান লেখেন, ‘‘সেদিন দেখলাম কোনো এক মঞ্চ থেকে কেউ কেউ তালে তালে বলছেন, ‘একটা একটা লীগ ধর, ধরে ধরে জবাই কর।’ রাষ্ট্রীয় দায়িত্বে থাকা মানুষেরা কেন এই চর্চায় কোনো সমস্যা পাচ্ছেন না? মব-জনতা উন্মাদনায় ভেসে যাচ্ছে জংলিপনায়। কিন্তু রাষ্ট্রের নিযুক্ত সেবকেরা কী করে এখানে নির্বিকার থাকবেন? এগুলোকে দণ্ডনীয় অপরাধ হিসেবে দেখতে চাই।’’


সবশেষে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে সায়ান বলেন, ‘গা ছেড়ে দিয়ে বসে থাকলে সংস্কৃতি পাল্টাবে না। কাজ করতে হবে। ক্যাম্পেইন করতে হবে। এখানে মানুষ গালি দেয়া এবং জবাই করার হুমকি দেবার মধ্যে দিয়ে দেশপ্রেমিকের দায়িত্ব শেষ করে। এগুলো বন্ধ করতে হবে। সরকারকে বলছি। গায়েবি মামলা দিয়ে তুলে নিয়ে যেয়েন না কাউকে কেউ কিছু বললেই। কোন কথাগুলো ভায়োলেন্ট এবং অফেন্সিফ, সেগুলোর তালিকা করেন। আইনীভাবে ঘৃণা চর্চাকে নিষিদ্ধ করেন। এটা কোনো রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করার জটিল প্রক্রিয়ার চেয়ে কিছুটা সহজ হবে করা। ঘৃণা চর্চাকে খাটো করে দেখবেন না। সেখান থেকে বৈধতা আসে বড় বড় অপরাধের।’

Next Post Previous Post

banner