" ১৯৭১ ও ২০২৫ সালের প্রেক্ষাপট এক নয়: কংগ্রেস নেতা - dailymorning.online

banner

১৯৭১ ও ২০২৫ সালের প্রেক্ষাপট এক নয়: কংগ্রেস নেতা

পাকিস্তানের সঙ্গে যুদ্ধবিরতির ঘোষণার পর কংগ্রেস যখন বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধের সময় ইন্দিরা গান্ধীর নেতৃত্বের উদাহরণ তুলে ধরে মোদি সরকারকে পরোক্ষভাবে কটাক্ষ করে, তখন দলটির জ্যেষ্ঠ নেতা শশী থারুর বলেন—১৯৭১ ও ২০২৫ সালের প্রেক্ষাপট এক নয়।

সংবাদ সংস্থা এএনআই-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে কংগ্রেস সাংসদকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, সরকার যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দেওয়ার পর কংগ্রেসের তরফে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ইন্দিরা গান্ধীকে সামনে এনে প্রচারণার বিষয়ে। এ বিষয়ে সরাসরি মন্তব্য না করলেও থারুর বলেন, "আমার মতে, পরিস্থিতি এমন জায়গায় পৌঁছেছিল যেখানে অকারণে উত্তেজনা বেড়েই চলছিল। আমাদের শান্তি প্রয়োজন। বাস্তবতা হলো, ১৯৭১ সালের অবস্থা আর ২০২৫ সালের অবস্থা এক নয়। এই দুই সময়ের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে।"

তিনি আরও বলেন, ভারতের মানুষ শান্তি প্রাপ্য। "আমরা অনেক কষ্ট সহ্য করেছি। পুঞ্চের মানুষকে জিজ্ঞেস করুন—কতজন প্রাণ হারিয়েছে। আমি বলছি না যুদ্ধ একেবারে বন্ধ করে দিতে হবে। যখন যুদ্ধ চালানোর যৌক্তিকতা থাকে, তখন তা চালাতে হয়। কিন্তু এটা এমন যুদ্ধ ছিল না যা চালিয়ে যাওয়া আমাদের উদ্দেশ্য ছিল। আমরা কেবল জঙ্গিদের একটি শিক্ষা দিতে চেয়েছিলাম, আর সেই শিক্ষা দেওয়া হয়েছে।"

তিনি জানান, পেহেলগামে হওয়া সন্ত্রাসী হামলায় জড়িতদের খুঁজে বের করার কাজ সরকার চালিয়ে যাবে বলেই তিনি নিশ্চিত। ওই হামলায় ২৬ জন নিরীহ মানুষ নিহত হয়েছিলেন। "এই কাজটা অপরিহার্য। তা একদিনে হবে না—মাস, এমনকি বছরও লেগে যেতে পারে। কিন্তু এটা করতেই হবে। নিরীহ ভারতীয়দের হত্যার দায় থেকে কাউকে ছাড় দেওয়া যাবে না। তবে এর মানে এই নয় যে পুরো জাতিকে দীর্ঘমেয়াদি যুদ্ধে জড়িয়ে বিপদের মুখে ফেলা হবে," বলেন তিনি।

পাকিস্তানের সঙ্গে এই সাম্প্রতিক সংঘাত নিয়ে তিনি বলেন, "আরও প্রাণ, অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ও সম্পদ হারানোর ঝুঁকি নেওয়ার কোনো যৌক্তিকতা ছিল না। আমাদের এখন ভারতীয় জনগণের কল্যাণ, উন্নয়ন এবং অগ্রগতির দিকেই মনোযোগ দেওয়া প্রয়োজন। আমার মনে হয়, এই মুহূর্তে শান্তির পথটিই সঠিক পথ।"

থারুর বলেন, ১৯৭১ সালের বিজয় ছিল ভারতের জন্য এক মহান অর্জন, যা একজন ভারতীয় হিসেবে তাকে গর্বিত করে তোলে। "ইন্দিরা গান্ধী উপমহাদেশের মানচিত্রই বদলে দিয়েছিলেন। কিন্তু তখনকার প্রেক্ষাপট ছিল একেবারেই আলাদা। আজকের পাকিস্তান ভিন্ন। তাদের অস্ত্রশস্ত্র, সামরিক ক্ষমতা এবং যে ক্ষতি তারা করতে পারে, সবকিছু এখন আলাদা।"

তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধে ভারত একটি নৈতিক দায়িত্ব পালন করেছিল, মানুষকে স্বাধীনতা দিতে এগিয়ে গিয়েছিল। "এই ঘটনা তার চেয়ে ভিন্ন। এতে উভয় পক্ষের অনেক প্রাণহানির মাধ্যমে দীর্ঘস্থায়ী সংঘাত শুরু হওয়ার আশঙ্কা ছিল। এটা কি ভারতের আজকের প্রাধান্যপ্রাপ্ত বিষয়? আমি মনে করি না। আমরা কেবল এই বার্তাটিই দিতে চেয়েছিলাম—সীমান্ত পেরিয়ে সন্ত্রাস পাঠালে তার মূল্য দিতে হবে।"

থারুর বলেন, ৭ মে’র ঘটনাকে ভারত কখনোই দীর্ঘ যুদ্ধের সূচনা হিসেবে দেখেনি। “পাকিস্তান যদি উত্তেজনা না বাড়াত, আমরাও বাড়াতাম না। কিন্তু ওরা বাড়াল, তাই আমরাও বাড়ালাম। এরপর অবস্থা এমন জায়গায় পৌঁছে গিয়েছিল, যেখানে সংঘাত চলতে থাকলে সেটা দীর্ঘ, উদ্দেশ্যহীন যুদ্ধে রূপ নিত। বাংলাদেশের মুক্তি ছিল এক স্পষ্ট লক্ষ্য। পাকিস্তানের দিকে গোলা ছুড়ে যাওয়া ছিল না সেই রকম কোনো স্পষ্ট লক্ষ্য। আপনি পার্থক্যটি বুঝতে পারছেন।”

যুদ্ধবিরতির খবর ছড়িয়ে পড়ার পরপরই কংগ্রেসের বিভিন্ন নেতা, এমনকি দলটির অফিশিয়াল পেজ থেকেও প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর ছবি শেয়ার করা হয়, যিনি ১৯৭১ সালে দেশকে বিজয়ে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। এসব পোস্ট অনেকের কাছে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে উদ্দেশ্য করে কটাক্ষ হিসেবেই বিবেচিত হয়। এ নিয়ে বিজেপি মুখপাত্র গৌরব ভাটিয়া পাল্টা প্রশ্ন তোলেন, কংগ্রেস কি তাদের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংকে ভুলে গেছে? ২৬/১১ মুম্বাই হামলার পর ইউপিএ সরকার কী পদক্ষেপ নিয়েছিল, সেটাও জানতে চান তিনি।

এদিকে, কংগ্রেসের যোগাযোগ বিভাগের প্রধান জয়রাম রমেশ প্রধানমন্ত্রী মোদির নেতৃত্বে একটি সর্বদলীয় বৈঠক ডাকার দাবি জানান, যাতে যুদ্ধবিরতির বিষয়ে আলোচনা করা যায়। পাশাপাশি, মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিওর "নিরপেক্ষ স্থান" মন্তব্য নিয়ে প্রশ্ন তোলেন—সরকার কি কাশ্মীর ইস্যুতে তৃতীয় পক্ষের মধ্যস্থতার দরজা খুলে দিয়েছে?

তিনি বলেন, “শেষ পর্যন্ত, ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস মনে করে—১৯৭১ সালে ইন্দিরা গান্ধীর অসাধারণ সাহসী ও দৃঢ় নেতৃত্বকে স্মরণ করাটা একেবারেই স্বাভাবিক।”

 

সূত্র: https://www.ndtv.com/india-news/india-pakistan-ceasefire-operation-sindoor-1971-2025-not-same-shashi-tharoor-amid-congress-indira-gandhi-campaign-8385297#pfrom=home-ndtv_topscroll

Next Post Previous Post

banner