ভয়ে পালাচ্ছিল সবাই, ছুটলাম আমরাও
মঙ্গলবার, দুপুর গড়িয়ে তখন সোয়া ২টা। পহেলগামের হোটেল থেকে প্রায় সাড়ে তিন কিলোমিটার দূরের বৈসরন ভ্যালি, যেটিকে সবাই ভালোবেসে ‘মিনি সুইজারল্যান্ড’ বলে ডাকেন, সেদিকে রওনা হয়েছিলাম। তবে মাত্র এক কিলোমিটার যাওয়ার পরই বাতাসে ছড়িয়ে পড়ে আতঙ্ক। উপরে চলছে এলোপাতাড়ি গুলি। শুনতে পেলাম, সন্ত্রাসীরা পর্যটকদের লক্ষ্য করে হামলা চালাচ্ছে।
চারপাশে হুলস্থুল অবস্থা। কিছু লোকজনকে নিচের দিকে ছুটে আসতে দেখলাম। মুহূর্তেই হাত-পা ঠান্ডা হয়ে এলো। স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে ছিলাম। তখনই ঘোড়ার সঙ্গী গাইড তড়িঘড়ি করে বলল, ‘ওয়াপস চলতে হ্যায় জলদি।’
আমি বালুরঘাটের বাসিন্দা, তবে কর্মসূত্রে থাকি অস্ট্রেলিয়ায়। গত জানুয়ারি মাসেই বিয়ে করেছি।স্ত্রী দীপান্বিতাকে নিয়ে কাশ্মীর ঘুরতে এসেছিলাম-যাকে বলে নিখাদ মধুচন্দ্রিমা। কে জানত, সেই স্বপ্নময় সফর হঠাৎ রূপ নেবে দুঃস্বপ্নে।
ওই উপত্যকা থেকে আতঙ্কিত পর্যটকদের হুড়োহুড়ি করে নামতে দেখে ভয়ের চোটে প্রাণ হাতে নিয়ে আমরাও ছুটে চললাম হোটেলের দিকে। ফিরে এসে দেখি, হোটেল কর্তৃপক্ষ জানিয়ে দিয়েছে, জানালা-দরজা সব বন্ধ রাখতে হবে। আমরা কার্যত বন্দি হয়ে পড়লাম। বাইরে কী হচ্ছে কিছুই বুঝতে পারছিলাম না। শুধু মনে হচ্ছিল-এটাই কি শেষ? ভয় হচ্ছিল, ওরা কেউ হোটেলে ঢুকে পড়বে না তো!
আরও কিছুক্ষণ পর জানতে পারি, পুরো পহেলগামে হোটেল, দোকান-সব বন্ধ হয়ে গেছে। রাতটা যেন দুঃস্বপ্নের মতো। ঘরের পর্দা সরিয়ে দেখলাম, বাইরে নীরব রাস্তা, কোথাও আলো নেই। অথচ ঠিক আগের দিন সন্ধ্যায় সেই রাস্তায় ছিল আনন্দ, মানুষের কোলাহল, কাশ্মিরি গানের সুর।
সেসব মুহূর্ত যেন এক নিমেষেই মুছে গেল
বুধবার সকালে সেনাবাহিনীর কনভয়ের নিরাপত্তায় পৌঁছাই শ্রীনগর বিমানবন্দরে। পথে দুপাশের দোকান, বাজার-সব বন্ধ। বিমানবন্দরে পৌঁছে পরিবারের সবাই একটু আশ্বস্ত হতে পেরেছে।
তবে শুনেছি, সেখানেই পৌঁছবে কিছু কফিনে মোড়ানো দেহ। যারা আর ফিরবেন না। বারবার মনে হচ্ছিল-তাদের পরিবারগুলোর কী হবে?