তৃতীয় দফায় যে দেশে মুখোমুখি হচ্ছে ওয়াশিংটন-তেহরান
পারমাণবিক কর্মসূচি ও যুক্তরাষ্ট্রের আরোপিত নিষেধাজ্ঞা নিয়ে তেহরান ও ওয়াশিংটনের মধ্যে আবারও আলোচনা শুরু হতে যাচ্ছে। ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে তৃতীয় দফার এই পরোক্ষ সংলাপ অনুষ্ঠিত হবে ওমানের রাজধানী মাসকটে।
সোমবার (২১ এপ্রিল) তেহরানে এক সাপ্তাহিক সংবাদ সম্মেলনে নিশ্চিত করেছেন ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ইসমাইল বাগাই। খবর আল-জাজিরা।
ইসমাইল বাগাই বলেন, এই আলোচনার মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার এবং ইরানের শান্তিপূর্ণ পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে থাকা উদ্বেগ দূর করা। আমরা সবসময় বলেছি—ইরানের পারমাণবিক কার্যক্রম শান্তিপূর্ণ, আইনসিদ্ধ এবং আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ। তবুও বিগত কয়েক দশকে আমাদের ওপর যেসব নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে, তা একতরফাভাবে চাপিয়ে দেওয়া, অবৈধ এবং মানবিক দিক থেকেও অগ্রহণযোগ্য।
তিনি আরও জানান, ওমানে অনুষ্ঠেয় তৃতীয় দফার বৈঠকে ইরান তাদের অবস্থান স্পষ্টভাবে তুলে ধরবে এবং মার্কিন নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের বিষয়টিই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকবে।
এর আগে দ্বিতীয় দফার বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় গত শনিবার (১৯ এপ্রিল) ইতালির রাজধানী রোমে অবস্থিত ওমান দূতাবাসে। যদিও ওই বৈঠক ছিল ‘পরোক্ষ’, কিন্তু সূত্রমতে—যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ এবং ইরানের উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি একপর্যায়ে সরাসরি কথাবার্তাও বলেন।
এদিকে বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এ আলোচনা কতটা ফলপ্রসূ হবে, তা নিয়ে এখনো অনিশ্চয়তা রয়েছে। অতীতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ২০১৫ সালের ঐতিহাসিক পরমাণু চুক্তি থেকে সরে গিয়েছিলেন এবং ইরানের ওপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন। ফলে ইরান বর্তমানে আলোচনায় কিছুটা সন্দেহপ্রবণ হলেও, আন্তর্জাতিকভাবে চীন ও রাশিয়ার সমর্থন নিয়ে তারা আবারও আলোচনার টেবিলে ফিরেছে।
ওমানের মধ্যস্থতায় অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া এই তৃতীয় বৈঠককে কূটনৈতিক মহলে গুরুত্বপূর্ণ একটি ধাপ হিসেবে দেখা হচ্ছে। যদিও উভয়পক্ষ এখনও নিজেদের অবস্থানে অনড় রয়েছে, তথাপি আলোচনার ধারাবাহিকতা বলছে—আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে নতুন করে পরমাণু কূটনীতির এক পর্ব শুরু হতে যাচ্ছে।
বিশ্লেষকদের মতে, মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনার মধ্যে এই আলোচনা একটি সম্ভাবনার জানালা খুলে দিতে পারে, যদিও এর পরিণতি নির্ভর করছে বড় পরাশক্তিগুলোর ভূমিকা ও পারস্পরিক বিশ্বাসের ওপর। এখন সময় বলবে—এই বৈঠক কেবল আনুষ্ঠানিকতা নাকি সত্যিকারের সমঝোতার পথ খুলবে।